• Read
  • Courses
  • Resources
  • Mock Test
  • Live Stream
    • Facebook Live
    • Youtube Live
  • YouTube Playlist
  • Blog
  • About
  • Contact
    [email protected]
    eItihaseItihas
    • Read
    • Courses
    • Resources
    • Mock Test
    • Live Stream
      • Facebook Live
      • Youtube Live
    • YouTube Playlist
    • Blog
    • About
    • Contact

    Modern India

    • Home
    • All courses
    • Modern India
    • Modern India / আধুনিক ভারত ।
    CoursesModern IndiaModern India / আধুনিক ভারত ।
    • IDEAS OF HISTORY 1

      আধুনিক ইতিহাসচর্চার বৈচিত্র্য

      • Lecture1.1
        নতুন সামাজিক ইতিহাস 05 min
      • Lecture1.2
        খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস 05 min
      • Lecture1.3
        ইন্দিরাকে লেখা জহরলাল নেহেরুর চিঠিপত্র 03 min
      • Lecture1.4
        ইতিহসের উপাদান হিসেবে সরকারি নথিপত্র 05 min
      • Lecture1.5
        বঙ্গদর্শন 05 min
      • Lecture1.6
        সোমপ্রকাশ 05 min
    • THE AGE OF REFORM 1

      উনিশ শতকের বাংলা সংবাদপত্র ও সাহিত্য

      • Lecture2.1
        উনিশ শতকের বাংলা সংবাদপত্র ও সাহিত্য 05 min
      • Lecture2.2
        কাঙাল হরিনাথ 05 min
      • Lecture2.3
        বামাবোধিনী পত্রিকা 05 min
      • Lecture2.4
        হিন্দু পেট্রিয়ট 05 min
      • Lecture2.5
        হুতোম প্যাঁচার নকশা 05 min
      • Lecture2.6
        ডেভিড হেয়ার 30 min
    • Resistance and rebellion 11

      প্রতিরোধ ও বিদ্রোহঃবৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ ।

      • Lecture3.1
        ঔপনিবেশিক অরণ্য আইন ও আদিবাসী জনগণের প্রতিক্রিয়া
      • Quiz3.1
        ঔপনিবেশিক অরণ্য আইন ও আদিবাসী জনগণের প্রতিক্রিয়া – QUIZ 8 questions
      • Lecture3.2
        চুয়াড় বিদ্রোহ
      • Quiz3.2
        চুয়াড় বিদ্রোহ QUIZ । 13 questions
      • Lecture3.3
        সাঁওতাল বিদ্রোহ
      • Lecture3.4
        মুন্ডা বিদ্রোহ ও বিরসা মুন্ডা
      • Quiz3.3
        মুন্ডা বিদ্রোহ QUIZ 20 questions
      • Lecture3.5
        রংপুর বিদ্রোহ 15 min
      • Lecture3.6
        ওয়াহাবি আন্দোলন 15 min
      • Lecture3.7
        ফরাজী আন্দোলন 15 min
      • Lecture3.8
        নীল বিদ্রোহ
    • Early Stage of Collective Action: Characteristics and Analyses 14

      সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথাঃ বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ ।

      • Lecture4.1
        বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা । 15 min
      • Quiz4.1
        বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা Quiz । 8 questions
      • Lecture4.2
        জমিদার সভা । 15 min
      • Quiz4.2
        জমিদার সভা Quiz । 11 questions
      • Lecture4.3
        হিন্দুমেলা । 15 min
      • Quiz4.3
        হিন্দু মেলা Quiz । 12 questions
      • Lecture4.4
        আনন্দমঠ । 15 min
      • Quiz4.4
        আনন্দমঠ Quiz । 13 questions
      • Lecture4.5
        বর্তমান ভারত । 15 min
      • Quiz4.5
        বর্তমান ভারত Quiz । 7 questions
      • Lecture4.6
        গোরা । 15 min
      • Quiz4.6
        গোরা Quiz । 8 questions
      • Lecture4.7
        ভারতমাতা । 15 min
      • Lecture4.8
        গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তাঁর ব্যঙ্গচিত্র। 15 min

      সাঁওতাল বিদ্রোহ

      বিদ্রোহী সাঁওতাল ।

      ভারতে ঔপনিবেশিক বিদ্রোহের সর্বাত্মক,সংগঠিত এবং স্বতঃস্ফূর্ত রূপ ছিলো ১৮৫৫-৫৬ খ্রিস্টাব্দের সাঁওতাল বিদ্রোহ । ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে লাগামছাড়া রাজস্ব বৃদ্ধি,মহাজনী শোষন,প্রশাসনিক অপদার্থতা,বহিরাগত বা দিকুদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সাঁওতালরা রক্তাক্ষয়ী সংগ্রামে অবতীর্ন হয়েছিল।তার অবসান ঘটেছিলো ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের দ্বিতীয় সপ্তাহে ।মাত্র আটমাস ব্যাপী রক্তাক্ষয়ী এই সংগ্রামে বলি হয়েছিলো প্রায় ২৫ হাজার সাঁওতাল।অত্যন্ত নিষ্ঠুর ভাবে এই বিদ্রোহ দমন করা হয়েছিল তা ভারতে ইংরেজ শাসনের এক কলঙ্কজনক অধ্যায়।অন্যদিকে সিধু-কানু-চাঁদ ভৈরবদের নেতৃত্বে সাঁওতালদের মরণপন লড়াই উপজাতি বিদ্রোহের এই উজ্জ্বল অধ্যায়।

      কিন্তু প্রশ্ন হলো আপাতশান্ত খুব সাধারণ সাঁওতালরা কেন বিদ্রোহী হয়ে উঠল?সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রেক্ষাপট বুঝতে গেলে আমাদের প্রথমে দামিন-ই-কোহ্‌ বা পর্বতের প্রান্তদেশ এলাকায় সাঁওতালদের আগমনের প্রেক্ষিত বুঝতে হবে।

      প্রথমেই সংক্ষেপে দেখে নিই সাঁওতাল কারা-

      প্রাথমিকভাব মনে করা হয় সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর মানুষরা হাজারিবাগের উত্তর-পশ্চিম অংশে সাময়িক ভাবে বসতি স্থাপন করেছিল। মেদিনীপুরের উত্তর-পশ্চিমে সীমান্তের ‘সাওন্ত’ নামক স্থানের অধিবাসী ছিল বলে তারা সাঁওতাল নামে পরিচিত হন ।জে.এফ.আর্চার আবার হাজারিবাগ জেলার অন্তর্গত আহুরি-পিপরি গ্রামকে সাঁওতালদের আদি নিবাস বলেছেন। যাই হোক সমগ্র সাঁওতাল উপজাতি সমাজ প্রায় সাত-আটটি গোষ্ঠীতে বিভক্ত ছিলো ।যেমন-হাঁসদা,মুর্মু,কিসকু,হেমব্রম।সরেণ,টুডু ইত্যাদি। সাঁওতাল সমাজের কোন জাতিভেদ ছিল না।প্রত্যেক গ্রামে একজন করে সর্দার নির্বাচিত হতেন এই সর্দারদের বলা হতো মাঝি ।

      পাহাড়িয়া- যে অঞ্চলে সাঁওতালরা স্থায়ী কৃষিজমির পত্তন করেছিল সেই দামিন-ই-কোহ এর রাজমহল পার্বত্য অঞ্চলে আধিপত্য ছিল পাহাড়িয়া জনগোষ্ঠীর।এর মূলত ঝুমচাষ ও শিকার এবং বনজ দ্রব্য সংগ্রহের ওপর জীবনধারণ করতো । তারা প্রায়শই সমতলে নেমে এসে লুঠপাঠ করতো ।এমনকি জমিদার এবং ব্যবসায়ীদের নিজেদের সুরক্ষার জন্য পাহাড়িয়াদের নজরানা দিতে হতো ।

      সাঁওতালদের ওপর অত্যাচার ।

      সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রেক্ষাপট ।

      চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের পর ভাগলপুর,রাজমহল এলাকার বনভূমি অধ্যুষিত এলাকার ওপর কোম্পানি বাহাদুরের নজর পড়ে।তারা ঐ এলাকায় যেমন বনভূমি পরিষ্কার করে কৃষির সম্প্রসারন ঘটাতে চেয়েছিল তেমনি পাহাড়িয়াদের স্থায়ী কৃষিতে অভ্যস্ত করে অনুগত এবং নিয়ন্ত্রিত জনগোষ্ঠিতে পরিনত করতে চেয়েছিল । কিন্তু পাহাড়িয়ারাঙকোন অবস্থায় তাদের স্বাধীনতা ও স্বতন্ত্রতা ত্যাগে রাজি ছিল না।এরপর ব্রিটিশ সরকার পাহাড়িয়াদের ওপর চরম নিষ্ঠুরতার নীতি গ্রহণ করে ।ফলত পাহাড়িয়া অঞ্চলে পরিত্যাগ করে গভীর জঙ্গলে চলে যায়।

      জঙ্গলা কীর্ণ পাথুরে জমি পরিষ্কার করে তাকে কৃষিযোগ্য করে তোলার জন্য সাঁওতালদের মতো নির্ভীক,কষ্টসহিষ্ণু ও পরিশ্রমী জনগোষ্ঠীর কোন বিকল্প ছিলো না। ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে রাজমহল পাহাড়ের পাদদেশে বিস্তৃর্ণ এলাকা দামিন-ই-কোহ বাঁ পাহাড়ের প্রান্তদেশ হিসেবে চিহ্নিত হলো।ঐ অঞ্চলের জমি সাঁওতালদের মধ্যে চাষ করার জন্য বিলি বন্দোবস্ত করা হলো ।১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে দামিন-ই-কোহ এলাকায় প্রায় ৪০টি সাঁওতাল গ্রামের পত্তন হয়েছিল। ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭৫টিতে।জনসংখ্যা ৩০০০ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৪২০০০ ।

      রাজস্ব বৃদ্ধি- ক্রমে দামিন-ই-কোহ এর এলাকাকে কোম্পানি তার ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থায় আওতায় নিয়ে আসে ।রাজস্ব চাহিদা ক্রমশ বাড়তে থাকে। ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি বছরে দুহাজার টাকা ঐ এলাকা থেকে আদায় করতো ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৪৪০০০ এ।

      বহিরাগত বা দিকুদের প্রভাব বৃদ্ধি- ক্রমাগত রাজস্ব বৃদ্ধি অন্যদিকে পাথুরে জমিকে শস্যশ্যামলয় পরিপূর্ণ করার জন্য প্রয়োজন ছিল নগদ অর্থের।ফলত দামিন-ই-কোহ এলাকায় বহিরাগত জোতদার ও জমিদারদের পাশাপাশি মহাজন এবং ব্যবসায়ীদের আগমন ঘটে। এইসব বাঙালি,মারোয়ারি,ভোজপুরি,ভাটিয়া মহাজন এবং ব্যবসায়ীদের সাঁওতালরা দিকু বলতো।

      মহাজনী শোষণ –F.B.Bradley Bint এবং George . E. Sommer প্রমুখরা মনে করেন সাঁওতালদের ঋণ গ্রহন বিষয়টি তাদের সাংস্কৃতিক জীবনের সঙ্গে যুক্ত ছিলো ।তাদের ব্যয়বহুল জীবনযাত্রার দরুণ ঋণের প্রয়োজন হয়েছিল । কিন্তু ডঃ বিনয়ভূষন চৌধুরি মনে করেন সাঁওতালদের কৌমভিত্তিক জীবনযাপন এবং গোষ্ঠীগত উৎসবে অর্থ ব্যায় করলেও তাকে বিলাসিতা বলা যায় না ।ডঃ চৌধুরির মতে সাঁওতালদের রসদ সীমিত হওয়ায় তারা ঋণ গ্রহনে বাধ্য হয়েছিল । এছাড়া দামিন-ই-কোহ এলাকায় জমি উর্বর হলেও একে কৃষির উপযুক্ত করে নেওয়া ছিলো ব্যায় সাপেক্ষ।

      যাইহোক সাঁওতালরা যখন ঋণ গ্রহন করতো তখন তারা যে চুক্তিতে আবদ্ধ হতো তার দুটি রূপ ছিলো-

      ১। কামিয়াতি প্রথা- এই শর্ত অনুযায়ী ঋণগ্রহীতার ঋণ শোধ না হওয়া পর্যন্ত মহাজনের জমিতে শ্রম দান করতে হতো ।

      ২।হারওয়ারি প্রথা-এতে যখনই দরকার হতো ঋণগ্রহীতাকে মহাজনের জমিতে লাঙল দিতে হতো বা অন্য কাজ করতে হতো। এর জন্য অবশ্য তারা দৈনিক একসের করে ধান পেত ।

      সাঁওতালরা কখনই ঋণের ফাঁদ থেকে বের হতে পারতো না।অন্যদিকে সুদের হার ছিলো অতি চড়া ।নূন্যতম শতকরা পঞ্চাশ টাকা থেকে শতকরা পাঁচশো টাকা পর্যন্ত হতো । আবার ঋণ দানের ক্ষেত্রে সাঁওতালদের অজ্ঞতা এবং অশিক্ষার সুযোগ নিয়ে তাদের দিয়ে অনেক বেশি টাকা নেওয়ার টিপ সই করিয়ে নেওয়া হতো ।এইভাবে সাঁওতাল্র বংশ পরম্পরা মহাজনী শোষণে জর্জরিত হয়ে জীবন ধারণ করত।

      ব্যবসায়ীদের প্রতারণা এবং অত্যাচার-বীরভুম,মুর্শিদাবাদ,বর্ধমান,উত্তর ওপশ্চিম ভারত থেকে যে সব ব্যবসায়ী এসেছিল তারা সাঁওতালদের কাছ থেকে সস্তাদরে ফসল কিনে নিতো এবং চড়া দরে বাইরে চালান দিত। বিনিময়ে নুন,তেল ইত্যাদি দিত বাঁ বিক্রি করতো ।এইসব ব্যবসায়ীরা সাঁওতালদের দামে ও ওজনে ঠকাতো,তাদের কাছে দুধরণের বাটখারা থাকতো-কেনারাম ও বেচারাম।তারা যখন সাঁওতালদের কাছ থেকে কোন জিনিস কিনতো তখন তারা অপেক্ষাকৃত ভারী বাটখারা বা কেনারাম ব্যবহার করতো যাকে বলা হতো বেচারাম।

      রেলকর্মীদের অত্যাচার- দামিন-ই-কোহ নিকটবর্তী অঞ্চলে রেলপথ স্থাপনের কাজ চলছিল। এই রেলপথ নির্মাণে সাঁওতালদের বলপূর্বক কাজে লাগানো হতো।অন্যদিকে রেল কোম্পানির কর্মচারীরা প্রায়শই সাঁওতালদের পল্লীতে ঢুকে জোর করে হাঁস, মুরগী,ছাগল কেড়ে নিতো।বাঁধা দিলে নির্মম অ্ত্যাচার নেমে আসত । এমকি দুজন সাঁওতাল মেয়ের ওপর পাশবিক অত্যাচার করা হয়।এই ঘটনায় সাঁওতালদের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দেয় ।

      আইন ও প্রশাসনের নিরবতা- সাঁওতালদের ওপর মহাজনী শোষন,ব্যবসায়ীদের প্রতারণা এবং রেলকর্মচারীদের অত্যাচারের প্রতিবিধান করার জন্য আইন ও প্রশাসনের দরজা প্রায় বন্ধ ছিল। কারন-

      ১। আদালত ছিল অনেক দূরে সিউড়ি,ভাগলপুর,দেওঘর মতো এলাকায়।

      ২।নিরক্ষর সাঁওতালদের পক্ষে আদালতে গিয়ে জটিল বিচার ব্যবস্থার সুবিধা নেবার মতো বিদ্যা,বুদ্ধি,সাহস কোনটাই ছিল না।

      ৩। সবচেয়ে বড়ো কথা বিচারক,সরকারি আমলা,পুলিশ দারোগা এরা প্রত্যেকেই জমিদার,ব্যবসায়ীদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট ছিলেন।

      প্রতিবাদের পথ ও ডাকাতি-

      সার্বিক শোষণের বিরুদ্ধে সাঁওতালরা প্রতিবাদ স্বরূপ প্রতিবাদ স্বরূপ প্রত্যয়ী আক্রমণের পথ বেছে নিয়েছিল। সাঁওতাল সর্দাররা যেমন বীর সিং, গোচ্চো,ডোমন মাঝি প্রমুখরা বাগসিরা, লিটিপাড়া,দরিয়াপুরের মহাজন,ব্যবসায়ীদের বাড়িতে ডাকাতি করা শুরু করে।রণজিৎ গুহের মতে কৃষকদের দৃষ্টিকোন থেকে ডাকাতিগুলি ছিলো ধনী শোষকদের লুন্ঠন করে অনাহারের যন্ত্রনা থেকে মুক্ত পাবারর বেপরোয়া প্রয়াস।

      কিন্তু কোম্পানি সাঁওতালদের এই অপরাধ কঠোর হাতে দমন করে।

      সিধু-কানু-চাঁদ-ভৈরবদের উত্থান ।

      বারহাইত গ্রাম থেকে আধমাইল দূরে ভগনাদিহি গ্রামে সিধু,কানু,চাঁদ,ভৈরবদের বাস। চুনা মুর্মুর এই চার সন্তানের প্রত্যেকেই ছিল অসাধারণ স্বাস্থ্যবান ও সক্ষম ।

      সিধু কানুদের যা কিছু বিষয় আশয় ছিলো তা ভাগ্যের ফেরে মহাজনদের ফাঁদে নিঃস্ব হয়ে যায়। সিধু-কানুরা উপলব্ধি করেন স্বাধীন সাঁওতালরাজ প্রতিষ্ঠিত না হলে এই প্রতারণা ও অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়, তা একমাত্র সম্ভব সঙ্গবদ্ধ সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে।

      সিধু ও কানু ।

      সিধু,কানু জানতেন সাঁওতালদের দেবদেবী ও অলৌকিকতায় অগাধ আস্থা ।দেবতার আহ্বানে তারা বিদ্রোহে শামিল হবে ।অন্যদিকে কোম্পানি জমিদার-মহাজনদের আক্রমনের আশঙ্কায় নানা ধরণের গুজব চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল ।

      দেখা দিয়ে এক টুকরো কাগজ দিয়ে জানিয়েছেন ‘মহাজনদের সঙ্গে লড়াই করো,তাহলে সুবিচার মিলবে।সিধু,কানু প্রচারকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলবার জন্য বাড়ির সামনে বাগানে ঠাকুরের মূর্তি তৈরি করে নিয়মিতভাবে পুজো-অর্চণা শুরু করে ।

      শালগাছের ডাল যা ঐক্যের প্রতীক তা পাঠিয়ে সিধু,কানু সাঁওতালদের ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে ৩০শে হুন ভগনাদিহির মাঠে জমায়েতের নির্দেশ দেন ।ঐ দিন প্রায় ১০০০০ সাঁওতাল ভগনাদিহির মাঠে মিলিত হয় ।

      ঐ মাঠে সকলে মিলে প্রতিজ্ঞা করেন যে তারা জমিদার, মহাজন ও ব্যবসায়ীদের বিতাড়িত করে স্বাধীন সাঁওতালরাজ প্রতিষ্ঠা করবে ।তারা আরো সিদ্ধান্ত গ্রহন করে যে তাদের দাবি-দাওয়া তারা কোলকাতায় গিয়ে সরকার বাহাদূরকে জানাবে।

      সাঁওতাল বিদ্রোহের বা হুলের সূত্রপাত- সাঁওতালদের এই প্রতিরোধ্র সংবাদে স্থানীয় জমিদার পুলিশ দারোগা সক্রিয় হয়ে ওঠে।সাঁওতালদের কাছে ত্রাস হয়ে উঠেছিল দিঘী থানার দারোগা মহেশলাল দত্ত।

      মহেশ দারোগা জমিদার ও মহাজনদের সঙ্গে যোগসাজস করে গর্ভূ মাঝি সহ বেশ কয়েকজন সাঁওতালদের বন্দী করে।এর প্রতিবাদে সিধু,কানুর নেতৃত্বে সাঁওতালরা সংঘবদ্ধ হয় এবং ঝাঁপিয়ে পড়ে মহেশ দারোগার ওপর।তাকে হত্যা করে ও হুল বা বিদ্রোহের ডাক দেয় । অনেকের মতে ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে ৭ই জুলাই মহেশ দারোগার হত্যার মুহুর্ত থেকে প্রকৃত সাঁওতাল বিদ্রোহের সূত্রপাত হয়েছিল।

      বিদ্রোহের বিস্তার- এরপর বিদ্রোহী সাঁওতালরা বারহাইত বাজার লুঠ করে । মহাজনদের প্রধান ঘাঁটি লিটিপাড়া আক্রমণ করে । এরপর সাঁওতালদের সঙ্গে মাল ও ভুয়াল উপজাতিরা যোগা দেয়, এমনকি পাশ্ববর্তী গ্রামের কামার,কুমোর,তেলি,ছুতোর,গোয়ালারা সাঁওতালদের নানাভাবে সাহায্য করতো ।

      সাঁওতালরা নীলকর সাহেব পাউটেটকে হত্যা করে,বিদ্রোহীরা রাজমহল ও ভাগলপুরের মধ্যে যাবতীয় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় ।

      কোম্পানি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে মেজর বারোস্কে বিদ্রোহ দমনের নির্দেশ দেন কিন্তু পিরপৈন্ডির কাছে বারোসের বাহিনী সাঁওতালরা ভৈরব ও চাঁদের নেতৃত্বে পাকুড়ের রাজবাড়ি আক্রমণ করে সর্বস্ব লুঠ করে গোলায় আগুন ধরিয়ে দেয়।পাকুড়ের কুখ্যাত মহাজন দীনদয়ালকে হত্যা করে। ১৮৫৫ সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে সাঁওতাল বিদ্রোহ চূড়ান্ত রূপ ধারণ করেছিল।বীরভূমের বহু এলাকা বিদ্রোহীদের দখলে চলে যায় ।

      পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করার জন্য স্বয়ং বড়লাট ডালহৌসি আসরে নামেন ।পনেরো হাজারের বেশি সুশিক্ষিত সেনাদল পাঠানো হয়। জমিদার,মুর্শিদাবাদের নবাবরা সৈন্য,হাতি,অর্থ দিয়ে সাহায্য করে।

      কোম্পানির বিশাল বাহিনী সাঁওতালদের গ্রামগুলি ওপর নৃশংস আক্রমণ শুরু করে।বারহাইত বিদ্রোহীদের হাতছাড়া হয়ে যায় ।ভগনাদিহিতে নিষ্ঠুর ভাবে বহু নিরাপরাধ সাঁওতাল শিশু,মহিলা ও বৃদ্ধ সহ বহু মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল ।

      প্রায় তেরোটা খন্ডযুদ্ধে বহু বিদ্রোহী সাঁওতাল বীরের মতো যুদ্ধ করে মৃত্যু বরণ করেছিল। ভাগলপুরের যুদ্ধে চাঁদ ও ভৈরব প্রাণ দেন ।

      সিধু,কানুর নেতৃত্বে সাঁওতালরা পুনরায় মরণপণ লড়াই শুরু করে । ভাগলপুরের যুদ্ধে বিদ্রোহীরা চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়। সিধু ইংরেজ বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয় । প্রসঙ্গত বল্র রাখা ভালো সিধু,কানুকে ধরিয়ে দেবার জন্য বিপুল অর্থমূল্যের পুরষ্কার ঘোষণা করা হয়েছিল ।বিশ্বাসঘাতকতার ফলে কানু ধরা পড়েছিল ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারিতে কানুকে ফাঁসি দেওয়া হয় ।বাকী বিদ্রোহীদের হাতির পায়ে পিষে ফেলে বাঁ গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। বহু বিদ্রোহী সাঁওতালকে গাছের ডালে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

      এই আটমাস ব্যাপী ‘হুল’ বাঁ সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রায় ২৫ হাজার সাঁওতাল প্রাণ দিয়েছিল।

      এটা ঠিক বিদ্রোহীরা শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয়েছিল । সিধু,কানু স্বপ্ন সম্পূর্ণরূপে পরিপূর্ণতা পায়নি কোম্পানি নির্দয়ভাবে সাঁওতাল বিদ্রোহ দমন করেছিল ।

      কিন্তু ভারতের কৃষক ও উপজাতি বিদ্রোহের ইতিহাসে সাঁওতাল বিদ্রোহ এক গৌরবজনক অধ্যায়।

      সাঁওতাল বিদ্রোহের কয়েকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য এই বিদ্রোহকে স্বতন্ত্রতা দিয়েছিল ।

      প্রথমতঃ বিদ্রোহীদের ঐক্য এবং সুদৃড় সংগঠন,শাল গাছের মারফৎ যেভাবে বিদ্রোহের আগুন যেভাবে চারিদিকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল তা দৃড় সাংগঠনিক ঐক্যের স্বাক্ষর বহন করেছিল ।

      দ্বিতীয়তঃ এই বিদ্রোহে ধর্মীয় অনুশাসন গুরুত্বপূর্ন ছিলো।সিধু,কানুর ঐশ্বরিক প্রত্যাদেশ সাঁওতালদের মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছিল ।

      তৃতীয়তঃ আদিবাসীদের জীবনে দলপতিদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম,তাই বিদ্রোহের নেতাদের নিয়ন্ত্রন এবং আদেশ ছিল চূড়ান্ত।মাঝি,সর্দার,পরগনাইতদের সুদৃড় নেতৃত্ব সাঁওতাল বিদ্রোহকে তীব্র করে তুলেছিল।

      চতুর্থতঃ এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে সাঁওতাল বিদ্রোহ অন্য আদিবাসী বা কৃষক বিদ্রোহের তুলনায় ছিলো অনেক বেশী জঙ্গী এবং হিংসাত্মক।সাঁওতালরা যেভাবে মহাজন,ব্যবসায়ীদের যেভাবে হত্যায় সামিল হয়েছিল তা ভয়াবহ সন্ত্রাসের পরিবেশ সৃস্টি করেছিল ।কিন্তু একথাও মনে রাখতে হবে তারা মূলত তাদের অত্যাচারীদের ওপরই খডগ হস্ত হয়েছিল।সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ কামার,কুমোর,তেলি,নাপিতরা উপরন্তু বিদ্রোহীদের সাহায্য করেছিল। এমনকি জোলা বাঁ মোমিন সম্প্রদায়ের মুসলমানরা বিদ্রোহীদের সাহায্য করেছিল ।

      পঞ্চমতঃ ডঃ রণজিৎ গুহ সাঁওতাল বিদ্রোহে সাঁওতালদের নিজেস্ব চেতনা অন্যদিকে গুজবের ভূমিকাকে গুরুত্ব দেওয়ার পক্ষপাতী।তারমতে গুজব ছিল ‘carrier of insurgency’ যদিও ডঃ বিনয় ভূষণ চৌধুরির মতে এই গুজব ছিল স্বল্পকাল স্থায়ী,এর সুদূরপ্রসারী ভূমিকা ছিলো না।

      Sharing is Caring
      Prev চুয়াড় বিদ্রোহ QUIZ ।
      Next মুন্ডা বিদ্রোহ ও বিরসা মুন্ডা

      Leave A Reply Cancel reply

      Your email address will not be published. Required fields are marked *

       

       

       

      e-itihas  is an e-learning platform, it makes the world of learning completely online.

      005370
      Pages

       

      • Read
      • Courses
      • Resources
      • Mock Test
      • Gallery
      • Blog
      • About
      • Contact

      Copyright 2020 - eItihas

      No apps configured. Please contact your administrator.

      Login with your site account

      No apps configured. Please contact your administrator.

      Lost your password?

      Not a member yet? Register now

      Register a new account

      Are you a member? Login now